ভূঞাপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণ করেছে বিএনপি নেতা নুরে আলম। ভাটাটি বন্ধে আদালতে মামলা হলেও আঁখি বিক্স নামে অবৈধ ইট ভাটাটি দীর্ঘদিন যাবৎ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পরিবেশ বিপর্যয় ও মহল্লাবাসী বিপাকের মুখে পড়লেও প্রশাসনের নিরবতা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
জানা যায়, ভূঞাপুর পৌরসভার শিয়ালকোল এলাকায় আঁখি বিক্স নামক এই ইট ভাটাটির সত্বাধিকারী ভূঞপুর থানা বিএনপির নেতা নুরে আলম ও তার সহযোগি শফিকুল ইসলাম তপন। অভিযোগ আছে, ২০১৬ সালে জুলাই মাসে নিরীহ কিছু মানুষের জমি দখল করে নির্মাণ শুরু করে ইট ভাটার কাজ। ভাটাটি বন্ধে এলাকাবাসী স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের লিখিত অভিযোগ ও আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতো কিছুর পরেও বন্ধ হয়নি ইট ভাটাটি। স্থানীয়ভাবে এলাকাবাসী মানবন্ধন কর্মসূচীও পালন করে। এছাড়া গত ২০১৬ সালে ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও (বাপা) আন্দোলনের নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
পরিবেশ বির্পযয় ঘটার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর, পৌরসভাসহ বিভিন্ন দফতর থেকে ইট ভাটা বন্ধের জন্য দয়ায় দফায় নোটিশ প্রদান করলেও অজ্ঞাত কারনে বন্ধ হয়নি ইট ভাটাটি।
জানা যায়, পৌরসভার শিয়ালকোল এলাকায় ১৯৯৪ সনে নূরে আলম ও তার বড় ভাই জয়নাল আবেদীন ইট ভাটা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সে সময় শিয়ালকোল গ্রামের হাতেম আলী নামক এক ব্যক্তি আদালতে মামলা দায়ের করলে সেখানে ইট ভাটা না করার জন্য আদালতে মুচলিকা প্রদান করেন নুরে আলম। এরপর ২০১৬ সালের জুলাই মাসের দিকে একই স্থানে ইট ভাটা নির্মাণের কাজ শুরু করে। গত ১৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে ইট ভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৯জুলাই ২০১৬ তারিখে উপ-পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫(সংশোধিত ২০০২) এর বিধি ০৭(৪) মতে ইট ভাটা নির্মাণের পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক এবং বিধি ০৭(৪) মতে ইট ভাটার কোন কার্যক্রম করতে পারে না। এছাড়া ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা নির্মাণ আইন ৮(খ) মতে সিটি করপোরেশন ও পৌর সভার মধ্যে কোন প্রকার ইট ভাটা নির্মাণ করা যাবে না। সে মতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ সরেজমিন প্রতিবেদনে ভূঞাপুর পৌর শহরের নির্মিত আঁখি বিক্সস নামে ইট ভাটাটি ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ৮উপধারা ১(ক), (খ), (ঘ), ৩ (ক), (ঙ) মোতাবেক ব্যাবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন।
আখিঁ বিকস এর সত্বাধিকারী নুরে আলম জানান, পৌরসভার মধ্যে কিভাবে অনুমতি দিল সেটা হাইকোর্টে গিয়ে খোঁজ নেন। হাইকোর্ট দশ বছরের জন্য অনুমতি দিয়েছে ইটভাটা ব্যবসার জন্য। মেয়াদ শেষে ইটভাটাটি সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, ইটভাটাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই আখিঁ বিকস নামের ওই ইটভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।