শরিফুল ইসলাম শরিফ : বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রামের আওতায় জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি দপ্তর থেকে প্রদেয় সেবাসমূহ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে দেশের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ প্রায় পঁচিশ হাজার সরকারি দপ্তরের ওয়েব সাইটের একটি সমন্বিত ওয়েব পোর্টাল খোলা হয়েছে। যাতে যে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরকারী কার্যালয়ের বিভিন্ন কার্যাবলির তথ্য পেয়ে যেতে পারে।
কিন্তু টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে গিয়ে কোন তথ্যই ঠিকমতো পাওয়া যায় না। যা কিছু তথ্য প্রথমে যুক্ত করা হয়েছিল সেসব তথ্যই এখনও রয়ে গেছে। অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে নতুন করে কোন তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি। কোনটিতে মৃত সাবেক চেয়ারম্যানের নাম, ছবি, মোবাইল নম্বরই রয়ে গেছে। আবার কোনটিতে চেয়ারম্যান বা পরিষদের সদস্যদের কোন তথ্যই নেই। নেই বর্তমান পরিষদের সদস্যদের তালিকা।
এছাড়া বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের সম্পূর্ন নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আবার কোনোটিতে এক ইউনিয়নের তথ্য এনে অন্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।
এতে করে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য জানার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেকেই। এছাড়া ত্রাণ ও পূনর্বাসন বিষয়ক, হতদরিদ্রের তালিকা, ভিজিএফ, মহিলা বিষয়ক, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিডি, সমাজসেবা বিষয়ক, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রবাসীদের তালিকা, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা, হাটবাজারের তালিকা, কাবিখা, কাবিটা, টি আর, জি আর, এলজিএসপি, এলজিডি, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এনজিও, ব্যাংক, বীমা, মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ, এতিমখানা, মাজার, আশ্রম, কবরস্থানসহ বিভিন্ন তথ্য থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো পূর্নাঙ্গ তথ্যই নেই।
জেলার মধুপুর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল সদর, ঘাটাইল, কালিহাতী, দেলদুয়ার, নাগরপুর, মির্জাপুর, সখিপুর, বাসাইল ও ধনবাড়ি উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটের চিত্রই এটি।
সদর উপজেলার গালা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যানের তথ্যের বদলে প্রয়াত সাবেক চেয়ারম্যানের ছবি, মোবাইল নাম্বারসহ তথ্যাদি রয়েছে। ভিজিডি তালিকায় রয়েছে দাইন্যা ইউনিয়নের ভিজিডি চক্রের কার্ডধারীদের নামের তালিকা। বিধবা ভাতার তালিকায় রয়েছে শুধুমাত্র পাঁচজন মহিলার নাম। মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় রয়েছে শুধুমাত্র আট মুক্তিযোদ্ধার নাম। অন্যান্য তথ্যগুলোরও হালনাগাদ নেই।
ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় ভাতার পরিমাণ নয়শত টাকা দেয়া আছে। অন্যান্য তথ্যগুলোও অপরিপূর্ণ।
বাসাইল উপজেলার বাসাইল ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায় বাসাইল ইউনিয়নের ইতিহাস সেখানে লেখা রয়েছে “বাসাইল উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ। এটি অনেক পুরান পরিষদ। বাসাইলের নাম অনুসারে পরিষদটির নাম করণ করা হয়।” এখানেও নেই চেয়ারম্যানের মোবাইল নাম্বারসহ যাবতীয় তথ্য।
ভুয়াপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায় বিধবা ভাতা সুবিধাভোগীর তালিকায় লেখা রয়েছে “ভূঞাপুর উপজেলাধীন গোবিন্দাসী ইউনিয়নে মোট বিধবা কার্ড ধারী মহিলার তালিকা নিম্ন রুপ: মোট কার্ড ধারী সংখ্যা হল ৪৩৫” এছাড়া সেই তালিকায় আর কিছু নেই।
দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত বিখ্যাত আটিয়া মসজিদ স্থান পায়নি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটের দর্শনীয় স্থানের তালিকায়।
ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায় মাতৃকালীন ভাতার তালিকা ফাকা।
গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজকুমার সরকার বলেন, আমি এ ব্যপারে বেশি বুঝি না। ভুল তথ্য ও তথ্যের হালনাগাদ না থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ ব্যপারে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শরীফ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টি দেখার কথা ইউনিয়ন সচিবের। তিনি নিজে ওয়েবসাইট আপডেট করবেন। আপডেট না থাকলে আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আশরাফুল মমিন খান বলেন, এ ব্যপারে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ জানায়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ জানালে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।