গ্লোবালাইজেশনের যুগে চোখ এখন ডিজিটাল বিশে^র দিকে। ডিজিটাল দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগুচ্ছে আমাদের বাংলাদেশও। সেই ডিজিটাল যুগের অন্যতম মাধ্যম ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইজে অনলাইন কার্যক্রম। ই-কমার্স তার সফল ফলাফল। ইলেক্ট্রনিক্স বা অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতিই ই-কমার্স। সারাবিশে^ ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ২০১৩ সালে বাংলাদেশেও ই-কমার্স প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। ওই বছরই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছর দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো দ্রুতগতির তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (থ্রিজি) চালু করে। এরপর চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (ফোরজি) চালু হয়। মানুষের স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে ই-কমার্স খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ বাড়ে। সব মিলিয়ে খাতটি লাভবান খাতের দিকে এগুতে থাকে। ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। আমাদের লেনদেনের ৪০ শতাংশ আসতে থাকে এমএফএসের মাধ্যমে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। করোনাকাল ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে বহুগুন। আলু-পটোলও যে অনলাইনে কেনা যায়, তা এই করোনাকাল শিখিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষকে। এখন অনেকেই অনলাইনে কাঁচাবাজারও সারছেন। ওষুধ ,ইলেকট্রনিক্স পণ্য, পোশাক, গৃহস্থালির বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার প্রবণতাও বেড়েছে। এবারের কোরবানিতে কোরবানির পশু কেনার আগ্রহও দেখা গেছে অনলাইনে। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে সুসময়ের স্বপ্ন ছিল ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তাদের। শিক্ষিত বেকার সমস্যা সমাধানের অন্যতম মাধ্যম হতো ই-কমার্স । সম্প্রতি ই-অরেঞ্জ বা ইভ্যালির ঘটনায় ই-কমার্স সব শ্রেণির মনুষের কাছে আলোচনায় এসেছে। এমন সমালোচিত ঘটনায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা। যেসময়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সুদিন দেখছিল উদ্যোক্তারা সেই সময়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো উল্টো পথে চলাটা ভাবিয়ে তুলেছে তরুণ উদ্যোক্তা, ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীদের। ডিজিটাল যুগে ঘরে বসে কেনাকাটা করাটা যেমন সময়ের দাবি ছিল ঠিক সেই সময়ে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করাটা নেহায়েত অনৈতিকতা বললেও কম হবে।
ঘরে বসে ঝুঁ^কিবিহীন ব্যবসা করবে এটা স্বপ্ন হলেও, বাস্তবে রুপ দিয়েছিল ই-কমার্স। ব্যস্ততার মাঝে অবসরে ঘরে বসেই বাজার করার বাস্তবায়ন করেছিল ই-কমার্স। ডিজিটাল যুগে এমন সুবিধা ভোগ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো দানবের হাতে চলে গেছে। লোভ শামলাতে না পেরে আংটির পরিবর্তে পেঁয়াজ পাঠিয়ে পেমেন্ট বুঝে নিচ্ছে। শাড়ি বিক্রেতার বলেন এটা বিক্রি করা যাবে না। এটা অনলাইনে বিক্রি করতে হবে। এমনতো অনৈতিকতার কথা ছিল না।
অনৈতিকতার ধারাবাহিকতায় ই-অরেঞ্জ, ইভ্যালির মতো বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও আজ দেউলিয়ার পথে। সরকারকে ই-কমার্সকেও বাঁচাতে হবে, নিঃস্ব গ্রাহকদেরও বাঁচাতে হবে। সরকারের সুষ্ঠু উদ্যোগের অপেক্ষায় দেশের সব শ্রেণির মানুষ।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর আগেও গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করেছিল নানা ধরণের এমএলএম কোম্পানী। এর সাথে কিছু এনজিও লোভনীয় অফারের মাধ্যমে দেউলিয়া হওয়ার ঘটনাও উঠে আসে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছিল তাদের সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছিলোনা। নব্বই দশকের শুরুতে এসডিএস নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান ও তাদের অঙ্গ সংগঠন আইটিসিএল সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো। তারা সরাসরি পন্য দিতেন। এমনকি অধিক লাভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা ডিপোজিট করে দেউলিয়া হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও পরে প্রতিষ্ঠানটি স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন সিরাজিকে আইনের আওতায় আনা হয়। প্রশিকা নামের এনজিওটি যখন নানা অভিযোগে দুর্বল হচ্ছিল তখনও কিন্ত গ্রাহক ভোগান্তি সীমাহীন ছিল। যদিও তাদের ঋণের টাকা মাঠে ছিল। এরপর আসা যাকা ডেসটিনি। ডেসটিনি একটি এমএলএম কোম্পানী ছিল। অতি লোভে ধাপিত হয়েছিল কোম্পানীতে বিনিয়োগ করতে। অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষরে সঙ্গে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে ডেসটিনি। বাগানে গাছ রোপনের প্যাকেজ দেখিয়ে নিজেদের নামে নিয়েছিল বিনিয়োগের টাকা। পাচার করেছিল বিদেশেও। অভযিুক্ত ব্যক্তিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালরে জুন মাস র্পযন্ত ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (ডিএমসিএসএল) ১ হাজার ৯০১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। সেই অর্থ থেকেই অভিযুক্তরা লাভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সরিয়ে নেন। এছাড়া যুবক নামের একটি প্রতিষ্ঠানও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এ দুটি প্রতষ্ঠিান সাধারণ গ্রাহকদরে সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য বিনিয়োগকারীরা আজও টাকা ফেরতের অপেক্ষায়। যদিও ডেসটিনি গ্রুপের পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ২২জন কর্মকর্তা বিচারের আওতায় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে হয়তো বর্তমানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সাহস করতো না। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতার আনার চেষ্টা করা হয়েছে । তবে গ্রাহকের বিনোয়োগ ফিরিয়ে দেয়ার তেমন কোন জোড়ালো পদক্ষেপ কখনই নজরে পড়েনি।
ই-কমার্সের উত্থানের যুগে হঠাৎ পতনের খবর গ্রাহক বা বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। নামে বেনামে বেড়ে ওঠা নানান ফ্রড ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেকেই ৪ লক্ষ টাকার মটরসাইকেল ২.৫ লক্ষ টাকায় পাওয়ার আশায় ৪৫-৬০ দিন পর ডেলিভারী মেনে নিয়ে অর্ডার করেন। বাংলাদেশে অনলাইন প্লাটর্ফমে ফ্রডের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। গ্রাহকের টাকা জমিয়ে তারা ২০০-৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নানা রকম ঝামেলা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিকপক্ষ প্রতারণামূলকভাবে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরদ্ধে তাহেরুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় এমন অভিযোগ এনে মামলা করার পর বিষয়টি অন্যান্য বিনীয়োগকারীদের নজরে আসে। মামলায় ই-অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান, মালিক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল¬াহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদসহ প্রতিষ্ঠানটির সব মালিককে আসামি করা হয়েছে।
এরপর উঠে আসে ইভ্যালির কথা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাদিয়া রাফিয়া রাফা গত বছরের ৩০ অক্টোবর ইভ্যালি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কক্সবাজারে রয়েল টিউলিপ রিসোর্টে একটি রুম বুক করেছিলেন। এ জন্য তিনি ছয় হাজার ৬৪১ টাকা দেন। তাঁর কোড নম্বর ১৫৩৯৯৫৪৯৭। এক মাস পর ইভ্যালি থেকে কল করে তাঁকে জানানো হয়, হোটেলটিতে সেই রুম বুক করার অফারটি আর নেই। অথচ অ্যাপে লেখা দেখাচ্ছিল সেখানে রুম আছে। এরপর তিনি টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দুই মাস ইভ্যালির অফিস ঘুরেও টাকা ফেরত পাননি। রাফিয়ার মতো লাখো গ্রাহকের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় গ্রাহকদের লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে ফেলে ভয়ানক প্রতারণা করেছে ই-কমার্স প¬্যাটফর্ম ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আট ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে প্রচলিত বিভিন্ন আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এসব অপরাধের দায়ে বিদ্যমান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এবং দন্ডবিধি ১৮৬০-এর বিভিন্ন ধারায় তিন বছরের কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের এসব অপরাধের দায় কোম্পানির ওপর বর্তায়। ই-কমার্স পরিচালনা বিষয়ক আলাদা কোনো আইন দেশে প্রচলিত না থাকলেও বিদ্যমান দন্ডবিধি ১৮৬০ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইন ২০০৯ অনুযায়ী অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পর সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ’ ও ‘প্রতারণা’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইভ্যালি তার গ্রাহকদের সঙ্গে হটলাইন নম্বর, সাপোর্ট ই-মেইল, ইভ্যালি অ্যাপি¬কেশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথাযথভাবে যোগাযোগ করে না। এ ধরনের ঘটনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ক্যাশব্যাক অফারের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ ই-ব্যালেন্স থেকে পণ্য ক্রয়ের সময় ১০০ শতাংশ ব্যবহার করতে না দেওয়াকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে উল্লে¬খ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণার মতো অসাধুতার জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ডাদেশ হতে পারে। ২০২১ এ ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না।
ই-ক্যাবের হিসাবে বছরে পন্য বিক্রির পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার মতো। এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছোট ছোট পণ্যবিক্রেতা রয়েছেন। আবার দোকান মালিকেরা অনেকেই অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন। পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা জার্মান ওয়েব পোর্টাল স্ট্যাটিস্টা গত মে মাসে বৈশ্বিক ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে চলতি জুলাই মাসে তারা আবার সেটি হালনাগাদ করে। স্ট্যাটিস্টার হিসাবে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক ই-কমার্স ব্যবসার বাজারের আকার দাঁড়াবে দুই লাখ কোটি ডলার। সবচেয়ে বড় বাজার চীন। এরপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি।
স্ট্যাটিস্টার পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে ই-কমার্সের আকার দাঁড়াবে ১৯৫ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এটা তাদের পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের চেয়ে কম। আগে তারা বলেছিল, চলতি বছর বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের বিক্রির পরিমাণ ২০৭ কোটি ডলারের বেশি হবে। স্ট্যাটিস্টা করোনাকে মাথায় নিয়ে তাদের নতুন প্রক্ষেপণ তুলে ধরেছে।
ই-অরেঞ্জ বা ইভ্যালির প্রতারণা পর ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসছে আরও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম। এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকে পরে সাধারণ গ্রাহক। কেউ পন্য কেনার জন্য এ্যাডভান্স পেমেন্ট করেন। আবার কেউ অতি লাভের আশায় লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। কেউ কেউ কম মূল্যে পন্য কিনে বেশি দামে বিক্রি করে অতি লাভের নেশায় বিনিয়োগ করেন। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাদিঘী গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক সাধারণ মানুষ প্রায় ১৫ কোটি টাকার পন্য কেনার এডভান্স পেমেন্ট করে পথে বসেছে। এদের অধিকাংশই ধার, দেনা করে বিনিয়োগ করেছে। এটা একদিকে যেমন লোভের ফল অন্যদিকে কোম্পানীয় লোভনীয় অফারে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলাও বলা যেতে পারে। এসব কোম্পানী পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা। প্রয়োজন সরকারের কঠোর নজরদারি। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যখন তাদের সাইট থেকে লোভনীয় অফার দিচ্ছিল তখনই সরকারে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পন্যের মূল্যে দুই তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক দামে অর্ডার কাটতে শুরু করলো , এমন কি পন্য দিতে না পারলে পন্যের মূল দাম ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন তখনই আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিৎ ছিল কোম্পানীগুলো প্রতারণা করবে। এক্ষেত্রে আমরা অনেকে ক্রেতাদের লোভটাকে দোষারুপ করছি। আসলে কি পুরটাই তাদের দোষ? যে পরিমান বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যেসকল তারকারা এসব কোম্পানীর বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন, তাতে ঝুঁকে পড়াটাও কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। এসব প্রতিষ্ঠান কখনও গোপনীয়ভাবে লেনদেন করে না। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এর দায় এড়াতে পারে না। আমাদের দেশে প্রতিযোগিতা নামে একটি আইন আছে। এই আইনের ৮ এর (ক) ধারায় বলা হয়েছে, বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব বিস্তারকারী অনুশীলণসমুহকে নিমূল করা, প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা, ও বজায় রাখা, এবং ব্যবসা বানিজ্যকে নিশ্চিত করা। ই-অরেঞ্জ বা ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সুষ্ঠভাবেও ব্যবসা করে গ্রাহকদের অর্ধেক দামে পন্য সরবরহ করতো তাহলে প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ি বাংলাদেশে এসব ব্যবসা চলতে পারে না। এদের ব্যবসায়িক কৌশল শুধুই প্রতারণা করা। এসব দানবদের হাত থেকে ই-কমার্সকে বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকেও। সেক্ষেত্রে পন্য গ্রাহকের হাতে পৌঁছানোর সাথে সাথে পেমেন্ট সিস্টেম চালু করলে এই ই-কমার্সকে প্রতারণা মুক্ত করা যেতে পারে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের ওপর দোষারুপ করে নিজের ক্ষতি বেছে নেয়া যাবেন না। গ্রাহক বা বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হতে হবে। সচেতনতাই প্রতারকদের কাছ থেকে বাঁচার প্রধান সুরক্ষা কবজ। আর আমাদের সচেতনতাই পারে দানবদের হাত থেকে ই-কমার্সকে বাঁচাতে। বাঁচাতে পারে নিঃস্ব হওয়ার হাত থেকে।